Duck hunt
Welcome
HomeHealth-tipsBlogAbout me
চলুন ইসলামিক গল্প পড়ি @ teletalk.xtgem.com

হাদীসের আলোকে আদর্শ স্বামী


আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে”। [সূরা : আর্-রূম: ২১] হাদীসে এসেছে, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি”।[1] স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের অর্ধাঙ্গ। মানুষ যেমন তার অর্ধেক অঙ্গ নিয়ে পূর্ণ জীবনের সাধ পেতে পারে না, তেমনি একজন লোক একজন ভাল স্বামী বা স্ত্রী ছাড়াও পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারে না। একে অপরকে যতটা বুঝতে পারবে তাদের জীবন ততটাই সুন্দর ও মধুময় হবে। একজন পুরুষের জীবনে যেমন অন্যতম আশা থাকে ভালো একজন স্ত্রী পাওয়া, তেমনিভাবে একজন মেয়েরও জীবনে সবচেয়ে বড় চাওয়া পাওয়া হলো ভালো একজন স্বামী ভাগ্যে জুটা। একমাত্র একজন আদর্শ স্বামীই পারে তার স্ত্রীর জীবনকে পূর্ণ করে দিতে। স্বামীর বাড়ির লোকজন যতই খারাপ হোক, যতই নিষ্ঠুর হোক, স্বামী যদি তার স্ত্রীকে বুঝতে পারে, তাকে ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দিতে পারে, তবে তাদের সংসার জীবন অনাবিল সুখে ভরপুর হয়ে যাবে। সেখানে পাওয়া যাবে জান্নাতের সন্ধান। এজন্য একজন ভাল স্বামী পাওয়াও কিন্তু ভাগ্যের ব্যাপার। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র মানবজাতির জন্য উত্তম আদর্শ। তিনি একদিকে যেমন একজন নবী-রাসূল, সেনাপতি, রাষ্ট্রপতি, অন্যদিকে তিনি তার স্ত্রীদের নিকট সবচেয়ে ভালোবাসার পাত্র ছিলেন। একজন স্বামী হিসেবে আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যদি আপনার আদর্শ বানাতে পারেন তবে পৃথিবীর সব স্ত্রীরাই সুখী হবেন, আপনার সংসারটা কানায় কানায় ভরে যাবে ভালোবাসায়। আপনি পাবেন আপনার স্ত্রীর সীমাহীন ভালোবাসা, আপনার স্ত্রী আপনাকে নিয়ে সকলের কাছে গর্ব করবে। বলবে, এমনই একজন স্বামী তার জীবনে স্বপ্ন ছিল। স্বামী হিসেবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ট মহামানব। কি কি কাজ করলে আপনি একজন আদর্শ স্বামী হবেন এবং স্বামী হিসেবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেমন ছিলেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো: স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করা: আপনি বাইরের কাজ করে এসে দেখলেন আপনার স্ত্রীর রান্না বা অন্যান্য কাজে বিলম্ব হচ্ছে, এতে আপনি ভ্রূকুটি না করে তার কাজে সহযোগিতা করুন, দেখবেন আপনাকে সে কত ভালোবাসে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের ঘরের কাজে সহযোগিতা করতেন। আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে তার স্ত্রীদের সাথে কী কী করতেন তা জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, “তিনি স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন, আর যখন নামাযের সময় হতো তখন তিনি নামাযে যেতেন”। [2] সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতাপ দেখানোর মত লোক ছিলেন না। বরং নিজের কাজ নিজেই করতেন। এ হাদীস দ্বারা তিনি উম্মতকে এ শিক্ষা দিয়েছেন যে, স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে, তাদের সাথে ঔদ্ধত্য আচরণ করা যাবে না। বাড়িতে নিজের কাজ নিজেই করা: আপনার স্ত্রী বাড়িতে সন্তান সন্ততি লালন পালন, সাংসারিক কাজ ইত্যাদি ঝামেলায় সব সময় ব্যস্ত থাকেন। ফলে অনেক সময় আপনাকে সময় দিতে পারেন না। তাতে আপনি তার উপর রাগ না করে আপনার ছোট খাট কাজ আপনি নিজেই সেরে ফেলতে পারেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাই করতেন। এক লোক আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞেস করলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে কি কাজ করতেন? উত্তরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, “হ্যাঁ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কাপড় নিজে সেলাই করতেন, জুতা মেরামত করতেন এবং পুরুষরা ঘরে যা করে তিনি তা করতেন”।[3] স্ত্রীকে যথাযথ সম্মান দেওয়া ও পারিবারিক কাজে তার পরামর্শ নেওয়া: আপনার পরিবারের সব ছোট বড় সিদ্ধান্তে আপনার স্ত্রীর মতামত গ্রহণ করুন। তাকে সম্মান দেখান, দেখবেন সেও আপনাকে অনেক সম্মান করবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের নানা সমস্যা তাঁর স্ত্রীদের কাছে জানাতেন। তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরামর্শ দিতেন। যেমন: হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফিরদের সাথে চুক্তি শেষ করে সাহাবাদেরকে হাদির পশু যবাই করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁরা রাসূলের হিকমত বুঝতে না পেরে যবাই করতে বিলম্ব করেন, এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হয়ে উম্মে সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট প্রবেশ ঘটনা জানান। তিনি এ সমস্যা সমাধানে সুন্দর মতামত দেন। “(এ ঘটনাটি উল্লেখ করে) উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন, আমি এর জন্য (অর্থাৎ ধৈর্যহীনতার কাফফারা হিসাবে) অনেক নেক আমল করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, সন্ধিপত্র লেখা শেষ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা উঠ এবং যবাই কর ও মাথা কামিয়ে ফেল। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তিনবার বলার পরও কেউ উঠলেন না। তাদের কাউকে উঠতে না দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে এসে লোকদের এ আচরণের কথা বলেন। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর নবী, আপনি যদি তাই চান, তাহলে আপনি বাইরে যান ও তাদের সাথে কোনো কথা না বলে আপনার উট আপনি নাহর (যবেহ) করুন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা মুড়িয়ে নিন। সে অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে গেলেন এবং কারো সাথে কোনো কথা না বলে নিজের পশু যবাই করলেন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা মুড়িয়ে নিলেন। তা দেকে সাহাবীগণ উঠে দাঁড়ালেন ও নিজ নিজ পশু কুরবানী দিলেন এবং একে অপরের মাথা কামিয়ে দিলেন। অবস্থা এমন হলো যে, ভীড়ের কারণে একে অপরের উপর পড়তে লাগলেন”। [4] স্ত্রী ও পরিবার পরিজনের সাথে বদান্যতা ও সুন্দর আচরণ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রী ও পরিবার পরিজনের সাথে সুন্দর আচরণকারী ছিলেন, তাদের সাথে কোমল ভাষায় কথা বলতেন, মাঝে মাঝে হাসি ঠাট্টা করতেন, তাদের সাথে ভালোবাসা ও বদান্যতার সাথে আচরণ করতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে পূর্ণাংগ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যে উত্তম চরিত্রের ও তার পরিবারের সাথে সদব্যবহার করে”। (তিরমিযী) ইবনে সা‘দ রহ. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে একান্তে অবস্থানকালীন সময়ের স্বভাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, তিনি বলেনঃ “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে কোমল ব্যক্তি, সদা সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল, তিনি কখনও তার সঙ্গীদের সামনে (তার শিষ্টাচারিতা ও পরিপূর্ণ সম্মানবোধের কারনে) পা প্রসারিত করে বসতেন না”। স্ত্রীর উপর অযথা রাগ না করা, তারা রেগে গেলে ধৈর্য্য ধারণ করা: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশি থাক এবং কখন রাগান্বিত হও।” আমি বললাম, কি করে আপনি তা বুঝতে সক্ষম হন? তিনি বললেন, তুমি প্রসন্ন থাকলে বল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রব-এর কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারাজ থাকলে বল, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের রব-এর কসম! শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহর্ কসম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! সে ক্ষেত্রে শুধু আপনার নাম মুবারক উচ্চারণ করা থেকেই বিরত থাকি।[5] প্রেম ও রোমান্টিকতা: আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে সবসময় ভালোবাসার কথা বলবেন, তাকে রোমান্টিকতা দিয়ে ভরপুর করে রাখবেন। আপনার স্ত্রী হয়ত ঘুরতে পছন্দ করেন, তাকে মাঝে মাঝে দূরে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যান, হারিয়ে যান কোনো অজানা প্রান্তে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদেরকে অনেক সফরে নিয়ে যেতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হায়েজ অবস্থায় পানি পান করে সে পাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিতাম। আমার মুখ লাগানো স্থানে তিনি তাঁর মুখ লাগিয়ে পান করতেন। আমি হায়েজ অবস্থায় হাড়ের টুকরা চুষে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিতাম। তিনি আমার মুখ লাগানো স্থানে তার মুখ লাগাতেন। [6] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “একবার আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক অভিযানে বের হলাম, তখন আমি অল্প বয়সী ছিলাম, শরীর তেমন মোটা ছিল না। তিনি তার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা আগে চল, ফলে তারা এগিয়ে গেল। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, এসো আমরা দৌঁড় প্রতিযোগিতা দেই, প্রতিযোগিতায় আমি এগিয়ে গেলাম। এরপরে আমার শরীরে মেদ বেড়ে গেল, একটু মোটা হলাম।একদা এক সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা আগে চল, ফলে তারা এগিয়ে গেল। অতঃপর আমাকে বললেন, এসো আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা দেই, প্রতিযোগিতায় তিনি এবার এগিয়ে গেলেন। তিনি হেসে হেসে বললেন, এটা তোমার পূর্বের প্রতিযোগিতার উত্তর (অর্থাৎ তুমি আগে প্রথম হয়েছিলে, এবার আমি প্রথম হলাম, তাই মন খারাপ করোনা)।[7] ইমাম তিরমিযী তার সুনান কিতাবের অধ্যায়ের শিরোনাম রচনা করেন: ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাত্রিকালীন খোশগল্প গুজব সম্পর্কে যা বর্ণিত।’ কাযী ‘ইয়াদ রহ. বলেন, বর্ণিত আছে যে, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “তোমরা এ অন্তরকে কিছুক্ষন পরপর শান্তনা দাও, কেননা তা লোহার প্রতিধধনির মত আওয়াজ করতে থাকে”। তিনি আরো বলেন, “মানুষের অন্তরকে যখন তার অপছন্দ কাজ করতে বলা হয় তখন সে অন্ধ হয়ে যায় অর্থাৎ সে আর কাজ করতে পারে না”। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যখন তোমরা ফিকহের মাসলা মাসায়েল শুনতে শুনতে একটু বিরক্তবোধ করবে তখন তোমরা কবিতা ও আরবদের কিচ্ছা কাহিনী শুনো”। স্ত্রীকে সদুপদেশ দেওয়া ও বুঝানো: আপনার পরিবারের কে কি রকম তা আপনি আপনার স্ত্রীকে আগেই জানিয়ে দিন। তাকে সবার স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে ধারণা দিলে সে অনুযায়ী তাদের সাথে মিলে মিশে চলতে সহজ হবে। মাঝে মধ্যে আপনি তাকে বিভিন্ন সদুপদেশ দেন, তাকে আপনার বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে বুঝান। এতে সে আপনাকে আরো বেশী ভালোবাসবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীদেরকে সদুপদেশ দিতেন। বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা নারীদের ব্যাপারে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ গ্রহণ করবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্য থেকে উপরের হাড়টি অধিক বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাকাই থেকে যাবে। কাজেই নারীদের সাথে কল্যাণ করার উপদেশ গ্রহণ কর।[8] স্ত্রীর পরিবার ও বান্ধবীদেরকে ভালোবাসা: স্বামীর পরিবার ও প্রিয়জনকে আদর আপ্যায়ন ও ভালোবাসা যেমন স্ত্রীর দায়িত্ব তেমনিভাবে স্ত্রীর পরিবার ও বন্ধু বান্ধবকে উত্তমরূপে আতিথেয়তা ও আদর যত্ন করাও স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য। হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার বান্ধবীর খোঁজ খবর নিতেন ও তার জন্য খাবার পাঠাতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পত্নীদের আর কাউকে ঈর্ষা করি নি, যদিও আমি তাঁকে পাই নি। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বকরী যবেহ করতেন তখন বলতেন, এর গোশত খাদীজার বান্ধবীদের পাঠিয়ে দাও। একদিন আমি তাঁকে রাগান্বিত করলাম, আর বললাম, খাদীজাকে এতই ভালোবাসেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, তার ভালোবাসা আমার অন্তরে গেঁথে দেওয়া হয়েছে”।[9] সন্তানের প্রতি যত্ন নেয়া: আপনি তখনই একজন প্রিয় স্বামী হবেন যখন আপনার স্ত্রীকে সন্তানদের লালন পালনের কাজে সহযোগিতা করবেন। আপনি সারা রাত নাক ডেকে ঘুমাবেন আর আপনার স্ত্রী একটু পর পর বাচ্চার ভিজা কাপড় পাল্টাবে, এভাবে হলে আপনার স্ত্রী আপনাকে একজন স্বার্থপর ভাববেন। আপনিও তার কাজে যতটুকু পারেন সহযোগিতা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচ্চাদেরকে খুব ভালোবাসতেন। আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে, তিনি বলেন, “পরিবার পরিজনের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত এত দয়াবান কাউকে দেখিনি”। [10] বুখারি ও মুসলিমে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি নামায শুরু করে লম্বা করতে চাই, তবে শিশুর কান্না শুনে হালকা করে শেষ করি, কারণ আমি মায়ের কষ্টের তীব্রতা জানি”। বাচ্চাদেরকে আনন্দ দেওয়ার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে তাদেরকে আদর করতেন এবং ভালো বাসতেন এর আরও প্রমাণ হল, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “মৌসুমের প্রথম ফল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেওয়া হত।তিনি তখন বলতেন, হে আল্লাহ! আমাদের মদীনায় আমাদের ফলে (বা উৎপন্ন ফসলে) আমাদের মুদ্দ-এ ও আমাদের সা‘-এ বরকত দান করুন,বরকতের উপর বরকত দান করুন।” অতপর তিনি ফলটি তাঁর নিকট উপস্থিত সবচেয়ে ছোট শিশুকে দিয়ে দিতেন”। [11] স্ত্রীকে পর্দায় রাখা: পর্দা করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা। কেননা তাঁদের আনুগত্য প্রতিটি নর- নারীর উপর ফরয করা হয়েছে। তাই একজন আদর্শ স্বামী হিসেবে আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো স্ত্রীকে পর্দায় রাখা। আল্লাহ্ তা‘আলা নারীদেরকে পর্দার নির্দেশ দিয়ে বলেন: “আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা,শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”। [সূরা : আন্-নূর: ৩১] তিনি আরো বলেন: “আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে”। [সূরা : আল-আহযাব: ৩৩] সুতরাং নারী নিজেকে ঢেকে রাখবে। এতে সে পবিত্রা থাকবে ও সংরক্ষিতা থাকবে, আর তবেই তাকে কষ্ট দেওয়া হবে না, ফাসেক বা খারাপ লোকেরা তাকে উত্যক্ত করতে সুযোগ পাবে না। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, নারীর সৌন্দর্য অপরের কাছে প্রকাশ হলেই তাকে কষ্ট, ফিৎনা ও অকল্যাণের সম্মুখীন হতে হয়। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ও আন্তরিতকতার সর্বোত্তম উদাহরণ: আপনি যদি আপনার স্ত্রীর জন্য এ হাদীসে বর্ণিত আবু যার‘য় হতে পারেন, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে ভালোবাসতেন সেভাবে ভালোবাসতে পারেন তবে আপনিই হবেন আপনার স্ত্রীর উত্তম স্বামী ও ভালোবাসার পাত্র। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একবার (জাহেলী যুগে) এগারজন মহিলা একত্রিত হয়ে এ প্রতিজ্ঞা করল যে, তারা তাদের স্বামীদের কোনো ভাল-মন্দ ও দোষ-ত্রুটির কথা গোপন করবে না। (অর্থাৎ তারা এ সব কথা বৈঠকে আলোচনা করবে)। প্রথমজন বলল: আমার স্বামী উটের গোস্তের মত কঠোর; পাহাড়ের চুড়ার ন্যায় উঁচু, তার কাছে যাওয়া অনেক কঠিন (অহংকার ও অসদচরিত্রের কারণে), তার স্ত্রীরা ও অন্যান্যরাও তার সাথে মেলামেশায় কোনো লাভবান হয় না। দ্বিতীয়জন বলল: আমার স্বামীর খবর আমি কাউকে জানাই না; কেননা যদি আমি তার দোষ বর্ণনা করি তবে সে আমাকে তালাক দিয়ে দিবে, ফলে আমি আমার সন্তান সন্তুতি হারাবো। অন্য কথায় বলা যায় যে, যদি আমি তার দোষ ত্রুটি বর্ণনা করতে বসি তবে তার ছোট বড় কোনো দোষই বাদ দিব না। তাই না বলাই ভালো। তৃতীয়জন বলল: আমার স্বামী একজন নির্বোধ (দুশ্চরিত্র), যদি তার দোষ ত্রুটি বলি তবে সে আমাকে তালাক দিবে, আর যদি আমি চুপ থাকি তবে সে আমাকে তালাক না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে নির্যাতন করবে। চতুর্থজন বলল: আমার স্বামী গভীর জলের মাছ নয়, অর্থাৎ তিনি মক্কার নিম্নভূমির মত সহজ সরল মানুষ, বেশি গরম ও না আবার বেশী ঠাণ্ডাও না, আবার বেশী পছন্দও না ও বেশী অপছন্দও না। অর্থাৎ মধ্যপন্থী স্বভাবের। পঞ্চমজন বলল: আমার স্বামী যুদ্ধের ময়দানে শক্তি ও বীরত্বে বাঘের মত, তার দানশীলতা ও অতিথিপরায়ণতায় তিনি ঘরে কি আছে বা নেই সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করে না। ষষ্ঠজন বলল: আমার স্বামী যদি খায় তবে পরিবারের কারো জন্য আর কিছু বাকি থাকে না, আর পরিবারের কেউ অসুস্থ বা অন্য কারণে কিছু চাইলে তারা পায় না। সপ্তমজন বলল: আমার স্বামী অক্ষম, পথভোলা, বোকা ও রোগাটে। যদি সে মারে তবে তোমাকে আহত বা শরীরের কোনো অংশ ভেঙ্গে ফেলবে বা দু’টাই করবে। অষ্টমজন বলল: আমার স্বামীর স্পর্শ খরগোশের স্পর্শের ন্যায় নরম ও তুলতুলে, আর তার সুগন্ধী জারনাব (একপ্রকার সুগন্ধী বৃক্ষ) গাছের মত। নবমজন বলল: আমার স্বামী সম্ভ্রান্ত পরিবারের, উচ্চভূমির ন্যায় সে গঠনে লম্বা, অধিক দানশীল ও অতিথিপরায়ণ। দশমজন বলল: আমার স্বামী একজন সম্রাট; তিনি সম্রাটেরও সম্রাট, কেননা তার অনেকগুলো উট আছে যাতে আল্লাহ পাক অনেক বরকত দিয়েছেন, চারণক্ষেত্রে তেমন পাঠাতে হয় না, আর তারা যখনই বীণার আওয়াজ শুনে তখনই বুঝতে পারে যে তাদেরকে যবাই করা হবে, অর্থাৎ তিনি একজন অতিথিপরায়ণ। একাদশতম বলল: আমার স্বামী আবু যার‘য়। তার কথা আমি কি বলব। সে আমাকে এত বেশী গহনা দিয়েছে যে, আমার কান ভারী হয়ে গেছে, আমার বাজুতে মেদ জমেছে এবং আমি এত সন্তুষ্ট যে, আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। সে আমাকে অত্যন্ত গরির পরিবার থেকে এনেছে, যে পরিবার ছিল শুধু কয়েকটি বকরীর মালিক। সে আমাকে অত্যন্ত ধনী পরিবারে নিয়ে আসে, যেখানে ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি এবং উটের হাওদার আওয়াজ এবং শস্য মাড়াইয়ের খসখসানি শব্দ শোনা যায়। সে আমাকে ধন- সম্পদের মধ্যে রেখেছে। আমি যা কিছু বলতাম সে বিদ্রূপ করত না, আমি নিদ্রা যেতাম এবং সকালে দেরী করে উঠতাম। আমি যখন পানি পান করতাম, তখন তৃপ্তি সহকারে পান করতাম। আর আবু যার‘য়ের মার কথা কি বলব! তার পাত্র ছিল সর্বদা পরিপূর্ণ এবং তার ঘর ছিল প্রশান্ত। আবু যার‘য়ের পুত্রের কথা কি বলব! সেও খুব ভাল ছিল। তার শয্যা এত সংকীর্ণ ছিল যে, মনে হত যেন কোষবদ্ধ তরবারি অর্থাৎ সে খুব হালকা- পাতলা দেহের অধিকারী ছিল। তার খাদ্য হচ্ছে ছাগলের একখানা পা। আর আবু যার‘য়ের কন্যার কথা বলতে হয় যে, সে কতই না ভালো। সে বাপ-মায়ের খুব বাধ্যগত সন্তান। সে অত্যন্ত সুস্বাস্থ্যের অধিরারিণী, যে কারণে সতীনরা তাকে হিংসা করে। আবু যার‘য়ের ক্রীতদাসীরও অনেক গুণ। সে আমাদের গোপন কথা কখনো ফাঁস করত না, সে আমাদের সম্পদের মিতব্যয়ী ছিল এবং আমাদের বাসস্থানকে আবর্জনা দিয়ে ভরে রাখত না। সে মহিলা আরও বলল: একদিন দুধ দোহনের সময়ে আবু যার‘য় বাইরে এমন একজন মহিলাকে দেখতে পেল যে, যার দু’টি পুত্র সন্তান আছে। ওরা মায়ের স্তন্য নিয়ে চিতা বাঘের মত খেলছিল (দুধ পান করছিল)। সে ঐ মহিলাকে দেখে আকৃষ্ট হল এবং আমাকে তালাক দিয়ে তাকে শাদী করল। এরপর আমি এক সম্মানিত ব্যক্তিকে শাদী করলাম। সে দ্রুতগামী অশ্বে অরোহণ করত এবং হাতে বর্শা রাখত। সে আমাকে অনেক সম্পদ দিয়েছে এবং প্রত্যেক প্রকারের গৃহপালিত জন্তু থেকে এক এক জোড়া আমাকে দিয়েছে এবং বলেছে: হে উম্মে যার‘য়! তুমি এ সম্পদ থেকে খাও, পরিধান কর ও উপহার দাও। মহিলা আরো বলল: সে আমাকে যা কিছু দিয়েছে, তা আবু যার‘য়ের একটি ক্ষুদ্র পাত্রও পূর্ণ করতে পারবে না আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরপর বলেন, “হে আয়েশা! আমি তোমার জন্য উক্ত আবু যার‘য়ের মত হবো”। হাইসাম ইবনে ‘আদিয়ের বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “হে আয়েশা! আমি তোমার জন্য ভালোবাসা ও ওয়াদাপূরণে উক্ত আবু যার‘য়ের মত হবো, তবে বিচ্ছিন্নতা ও দেশান্তরে তার মত হবো না”। তাবরানীর বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তবে সে (আবু যার‘য়) তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে, আমি তোমাকে কখনও তালাক দিবো না”। নাসাঈ ও তাবরানীর অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: “হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরং আপনি আবু যার‘য়ের চেয়ে অধিক উত্তম”। [12]
Back to posts
This post has no comments - be the first one!

UNDER MAINTENANCE
any problem in topic language Now can do you translate
Guest: 1 Total: 2320 U-ONimage