![](http://www.islamicalo.com/_images/article/148.jpg)
বিসমিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ
ওয়াস সালাতু ওয়াস সালাম
আলা রাসুলিল্লাহ ওয়া আলা
আলিহি ওয়া আসহাবিহি
আজমাইন আম্মাবাদ
প্রশ্ন ১৩৯ : লাইলাতুল কদরের
মর্যাদা, বৈশিষ্ট্য ও
ফযীলাত জানতে চাই।
উত্তর
: (১) এ রাতে আল্লাহ
তা‘আলা পুরা কুরআন
কারীমকে লাউহে মাহফুয
থেকে প্রথম আসমানে
নাযিল করেন। তাছাড়া
অন্য আরেকটি মত আছে যে, এ
রাতেই কুরআন নাযিল শুরু হয়।
পরবর্তী ২৩ বছরে বিভিন্ন
সূরা বা সূরার অংশবিশেষ
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন
ঘটনা ও অবস্থার প্রেক্ষিতে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম’র উপর অবতীর্ণ
হয়। (২) এ এক রজনীর ইবাদত
হাজার মাসের ইবাদতের
চেয়েও উত্তম। (৩) এ রাতে
পৃথিবীতে অসংখ্য
ফেরেশতা নেমে আসে এবং
তারা তখন দুনিয়ার কল্যাণ,
বরকত ও রহমাত বর্ষণ করতে
থাকে। (৪) এটা শান্তি
বর্ষণের রাত। এ রাতে
ইবাদত গুজার বান্দাদেরকে
ফেরেশতারা
জাহান্নামের আযাব থেকে
মুক্তির বাণী শুনায়। (৫) এ
রাতের ফাযীলত বর্ণনা
করে এ রাতেই একটি পূর্ণাঙ্গ
সূরা নাযিল হয়। যার নাম
সূরা কদর। (৬) এ রাতে নফল
সালাত আদায় করলে
মুমিনদের অতীতের সগীরা
গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া
হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
যে ব্যক্তি ঈমান ও
সাওয়াব লাভের আশায়
কদরের রাতে নফল সালাত
আদায় ও রাত জেগে ইবাদত
করবে আল্লাহ তার
ইতোপূর্বের সকল সগীরা
(ছোট) গুনাহ ক্ষমা করেদেন।
(বুখারী) প্রশ্ন ১৪০ : কোন
রাতটি লাইলাতুল কদর? উত্তর
: এ প্রশ্নের উত্তর স্বরূপ
হাদীসে নিুবর্ণিত বাণী
রয়েছে : [১] এ রাতটি রমযান
মাসে। আর এ রাতের ফযীলত
কিয়ামত পর্যন্ত জারী
থাকবে। [২] এ রাতটি
রমাযানের শেষ দশকে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“রমাযানের শেষ দশদিনে
তোমরা কদরের রাত তালাশ
কর।” (বুখারী)
[৩] আর এটি রমযানের
বেজোড় রাতে হওয়ার
সম্ভাবনা বেশী। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“তোমরা রমাযানের শেষ ১০
দিনের বেজোড়
রাতগুলোতে কদরের রাত
খোঁজ কর।” (বুখারী)
[৪] এ রাত রমযানের শেষ
সাত দিনে হওয়ার সম্ভাবনা
বেশী। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন :
“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর
(কদরের রাত) অন্বেষণ করতে
চায়, সে যেন রমাযানের
শেষ সাত রাতের মধ্য তা
অন্বেষণ করে।”
[৫] রমাযানের ২৭ শে রজনী
লাইলাতুল কদর হওয়ার
সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। ক.
হাদীসে আছে :
উবাই ইবনে কাব
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত
হাদীসে এসেছে, তিনি
বলেন যে, আল্লাহর শপথ করে
বলছি, আমি যতদূর জানি
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে
যে রজনীকে কদরের রাত
হিসেবে কিয়ামুল্লাইল
করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন
তা হল রমাযানের ২৭ তম
রাত। (মুসলিম)
(খ) আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার
থেকে বর্ণিত, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“যে ব্যক্তি কদরের রাত
অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন
তা রমাযানের ২৭শে
রজনীতে অনুসন্ধান করে।
(আহমাদ)
[৬] কদরের রাত হওয়ার
ব্যাপারে সম্ভাবনার দিক
থেকে পরবর্তী দ্বিতীয়
সম্ভাবনা হল ২৫ তারিখ,
তৃতীয় হল ২৯ তারিখে। চতুর্থ
হল ২১ তারিখ। পঞ্চম হল ২৩
তারিখের রজনী। [৭]
সর্বশেষ আরেকটি মত হল-
মহিমান্বিত এ রজনীটি
স্থানান্তরশীল। অর্থাৎ
প্রতি বৎসর একই তারিখে বা
একই রজনীতে তা হয় না এবং
শুধুমাত্র ২৭ তারিখেই এ
রাতটি আসবে তা
নির্ধারিত নয়। আল্লাহর
হিকমত ও তাঁর ইচ্ছায় কোন
বছর তা ২৫ তারিখে, কোন
বছর ২৩ তারিখে, কোন বছর
২১ তারিখে, আবার কোন বছর
২৯ তারিখেও হয়ে থাকে।
প্রশ্ন ১৪১ : কেন এ রাতকে
অস্পষ্ট করে গোপন রাখা
হয়েছে। এটা স্পষ্ট করে
নির্দিষ্ট করে বলা হয় নি
কেন?
উত্তর : এ রাতের
পুরস্কার লাভের আশায় কে
কত বেশী সক্রিয় অগ্রণী
ভূমিকা পালন করে এবং কত
বেশী সচেষ্ট হয়, আর কে
নাফরমান ও আলসে ঘুমিয়ে
রাত কাটায় সম্ভবতঃ এটা
পরখ করার জন্যই আল্লাহ
তা‘আলা এ রাতকে গোপন ও
অস্পষ্ট করে রেখেছেন।
প্রশ্ন
১৪২ : যে রাতটি লাইলাতুল
কদর হবে সেটি বুঝার কি
কোন আলামত আছে?
উত্তর :
হাঁ, সে রাতের কিছু আলামত
হাদীসে বর্ণিত আছে।
সেগুলো হল :
(১) রাতটি গভীর অন্ধকারে
ছেয়ে যাবে না। (২)
নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ
গরম বা শীতের তীব্রতা
থাকবে না। (৩) মৃদুমন্দ
বাতাস প্রবাহিত হতে
থাকবে। (৪) সে রাতে
ইবাদত করে মানুষ
অপেক্ষাকৃত অধিক
তৃপ্তিবোধ করবে। (৫) কোন
ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ
স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও
দিতে পারেন। (৬) ঐ রাতে
বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে। (৭)
সকালে হালকা
আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয়
হবে। যা হবে পূর্ণিমার
চাঁদের মত।
(সহীহ ইবনু খুযাইমাহ- ২১৯০,
বুখারী০ ২০২১, মুসলিম- ৭৬২
নং হাদীস)
প্রশ্ন ১৪৩ :
রমাযানের শেষ দশ রাতে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কী ধরণের
ইবাদত করতেন?
উত্তর : তাঁর
ইবাদতের অবস্থা ছিল
নিম্নরূপ : ১. প্রথম ২০ রাত
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম পূর্ণ রাত
জাগরণ করতেন না। কিছু সময়
ইবাদত করতেন, আর কিছু অংশ
ঘুমিয়ে কাটাতেন। কিন্তু
রমাযানের শেষ দশ রাতে
তিনি বিছানায়
একেবারেই যেতেন না।
রাতের পুরো অংশটাই
ইবাদত করে কাটাতেন। সে
সময় তিনি কুরআন
তিলাওয়াত, সলাত আদায়
সদাকা প্রদান, যিকর, দু‘আ,
আত্মসমালোচনা ও তাওবাহ
করে কাটাতেন। আল্লাহর
রহমাতের আশা ও তার
গজবের ভয়ভীতি নিয়ে
সম্পূর্ণ খুশুখুজু ও বিনম্রচিত্তে
ইবাদতে মশগুল থাকতেন। ২.
হাদীসে এসেছে সে সময়
তিনি শক্ত করে তার লুঙ্গি
দ্বারা কোমর বেধে
নিতেন। এর অর্থ হল,
রাতগুলোতে। তাঁর সমস্ত শ্রম
শুধু ইবাদতের মধ্যেই নিমগ্ন
ছিল। নিজে যেমন অনিদ্রায়
কাটাতেন তাঁর
স্ত্রীদেরকেও তখন জাগিয়ে
দিতেন ইবাদত করার জন্য। ৩.
কদরের রাতের ইবাদতের
সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে
না যায় সেজন্য রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম শেষ দশদিনের
পুরো সময়টাতে ইতেকাফরত
থাকতেন। (মুসলিম-
১১৬৭)
প্রশ্ন ১৪৪ :
মহিমান্বিত লাইলাতুল
কদরে আমরা কী কী ইবাদত
করতে পারি?
উত্তর : রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যেভাবে এ
রাত কাটাতেন এর পূর্ণ
অনুসরণ করাই হবে আমাদের
প্রধান টার্গেট। এ লক্ষ্যে
আমাদের নিুবর্ণিত
কাজগুলো করা আবশ্যক : (ক)
নিজে রাত জেগে ইবাদত
করা এবং নিজের অধীনস্ত ও
অন্যান্যদেরকেও জাগিয়ে
ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করা। (খ)
লম্বা সময় নিয়ে তারাবীহ ও
তাহাজ্জুদ পড়া। এসব
সালাতে কিরাআত ও রুকু-
সিজদা লম্বা করা। রুকু
থেকে উঠে এবং দুই সিজদায়
মধ্যে আরো একটু বেশী সময়
অতিবাহিত করা, এসময় কিছু
দু‘আ আছে সেগুলে পড়া। (গ)
সিজদার মধ্যে তাসবীহ পাঠ
শেষে দু‘আ করা। কেননা
সিজদাবনত অবস্থায় মানুষ
তার রবের সবচেয়ে নিকটে
চলে যায়। ফলে তখন দু‘আ কবুল
হয়। (ঘ) বেশী বেশী তাওবা
করবে আস্তাগফিরুল্লাহ
পড়বে। ছগীরা কবীরা
গোনাহ থেকে মাফ চাইবে।
বেশী করে শির্কী গোনাহ
থেকে খালেছ ভাবে
তাওবা করবে।
কারণ
ইতিপূর্বে কোন শির্ক করে
থাকলে নেক আমল তো কবুল
হবেই না, বরং অর্জিত অন্য
ভাল আমলও বরবাদ হয়ে
যাবে। ফলে হয়ে যাবে
চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
(ঙ) কুরআন তিলাওয়াত করবে।
অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ কুরআন
অধ্যয়নও করতে পারেন।
তাসবীহ তাহলীল ও যিক্র-
আযকার করবেন। তবে যিকর
করবেন চুপিসারে, নিরবে ও
একাকী এবং কোন প্রকার
জোরে আওয়ায করা ছাড়া।
এভাবে যিকর করার জন্যই
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন
:
“সকাল ও সন্ধ্যায় তোমার
রবের যিকর কর মনে মনে
বিনয়ের সঙ্গে ভয়ভীতি
সহকারে এবং জোরে
আওয়াজ না করে। এবং
কখনো তোমরা আল্লাহর
যিকর ও স্মরণ থেকে উদাসীন
হয়োনা।” (আরাফ :
২০৫) অতএব, দলবেধে সমস্বরে
জোরে জোরে উচ্চ স্বরে
যিক্র করা বৈধ নয়। এভাবে
সম্মিলিত কোন যিকর করা
কুরআনেও নিষেধ আছে
নবীজি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তা
করেন নি। যিকরের শব্দগুলো
হল: সুবহানাল্লাহ,
আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা
ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার
ইত্যাদি। (চ) একাগ্রচিত্তে
দু‘আ করা। বেশী বেশী ও
বার বার দু‘আ করা। আর এসব
দু‘আ হবে একাকী ও বিনম্র
চিত্তে কবুল হওয়ার
প্রত্যাশা নিয়ে। দু‘আ করবেন
নিজের ও আপনজনদের জন্য.
জীবিত ও মৃতদের জন্য,
পাপমোচন ও রহমত লাভের
জন্য, দুনিয়ার শান্তি ও
আখিরাতের মুক্তির জন্য।
তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ
রাতে নিুের এ দু‘আটি বেশী
বেশী করার জন্য উৎসাহিত
করেছেন :
“ হে আল্লাহ! তুমি
তো ক্ষমার আধার, আর ক্ষমা
করাকে তুমি ভালবাস।
কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা
করে দাও। (তিরমিযী)
UNDER MAINTENANCE